কুমিল্লা নিউজ ডেস্ক।।
কুমিল্লা আদর্শ সদরের বারপাড়া থেকে বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজার বেড়াতে আসা রাব্বী হোসেন গত ১০ দিন ধরে নিখোঁজ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন রাব্বীর পরিবার। সে কি আত্মগোপন করেছে নাকি কেউ তাকে অপহরণ বা কোথাও বন্ধক রেখেছে তার সঠিক তথ্য মিলছে না।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ জানুয়ারি কুমিল্লা আদর্শ সদরের বারপাড়া থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন রাব্বী ও তার ৫ বন্ধু। তাদের বহরে ছিল আরও শতাধিক লোক। উঠেন কলাতলী হোটেল-মোটেল জোনের সি ল্যান্ড-২ নামে একটা হোটেলে। যেখানে রাত্রী যাপনের পর ২৭ জানুয়ারি সকাল থেকে নিখোঁজ হন রাব্বী। নিখোঁজ হওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে পরিবারকে জানানোর কথা থাকলেও জানায়নি বন্ধুরা। থানায় অভিযোগ বা জিডিও করেনি। যা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। অন্যদিকে পরিবারটিতে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
নিখোঁজ রাব্বী হোসেন কুমিল্লা আদর্শ সদরের বারপাড়া এলাকার আলী হোসেনের ছেলে। পেশায় রাজমিস্ত্রি। বাবা-মা, বোন ও স্ত্রী সন্তান নিয়ে থাকতেন।
এদিকে রাব্বীকে না পেয়ে ১ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রাব্বীর চাচা সবুজ মিয়া।
তিনি জানান, হাকিম, আরিফ, তোফাজ্জলসহ এক কক্ষে ছয়জন ছিলেন রাব্বীর সঙ্গে। সে ২৭ জানুয়ারি সকালে বেরিয়ে আর ফিরে আসেনি। রাব্বীকে ছাড়াই ট্যুরে আসা লোকজন কুমিল্লায় ফিরে যান ২৮ জানুয়ারি। তাহলে রাব্বী গেল কোথায়। তার কোনো খোঁজ দিতে পারছে না কেউ।
তিনি আরও জানান, রাব্বীর গাঁজা সেবনের অভ্যাস রয়েছে। তবে কেউ টাকা-পয়সা পায় না তার কাছে, কোনো ঋণও নেই। হোটেলে রাতে বন্ধুদের সঙ্গে নাকি ঝগড়া করেছে। আসলে তার ভাগ্যে কী ঘটেছে জানি না।
রাব্বীর বড় ভাই প্রবাসী শাকিল বলেন, ‘এলাকায় আরিফ, হাকিম, তোফাজ্জল ওরা চিহ্নিত মাদক কারবারি। তাদের নেতৃত্ব দেয় ফারুক। আমরা ধারণা করছি, তারা কোথাও আমার ভাইকে বন্ধক রেখেছে। কিন্তু বলছে না।’
রাব্বীর স্ত্রী লক্ষ্মী আক্তার বলেন, ‘২৫ জানুয়ারি যাওয়ার সময় সর্বশেষ কথা হয়। আমি মোবাইল ব্যবহার করি না। সে সকালে নিখোঁজ হলেও পরিবারে খবর দেয়া হয়েছে ২৭ তারিখ রাত নয়টার দিকে। তারা কোনো জিডি বা পুলিশেও খবর দেয়নি। আমাদেরকেও দেরিতে জানায়। সব রহস্যজনক। বন্ধুরাও এসে কিছু বলছে না। মেয়েটা এ দিকে তার বাবাকে খোঁজছে।’
রাব্বী কোনো কারণে কি আত্মগোপন করতে পারে কিনা জানতে চাইলে লক্ষ্মী আক্তার বলেন, ‘সেরকম কোনো কারণ দেখছি না। আমার দুই বছরের মেয়ে ইসরাত জাহান। প্রতিনিয়ত বাবাকে খোঁজছে। বাবা কোথায় জিজ্ঞেস করে করে আর্তনাদ করছে। কেউ কিছু বলতে পারছে না। আমি দ্রুত আমার স্বামীর সন্ধান চাই।’
সি ল্যান্ড-২ হোটেলের ম্যানেজার মোহাম্মদ রনি জানান, রাব্বীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো তথ্য নেই। রাব্বীর সঙ্গীরা তাদের জানায়নি কিছু। তারা চলে যাওয়ার পাঁচ দিন পর পরিবারের লোকজন খুঁজতে এলে বিষয়টা তারা জানতে পারেন। পরে পুলিশও এসে খোঁজ নিয়েছে।
কুমিল্লা ট্যুরটির নেতৃত্ব দেয়া তোফাইয়েল আহমেদ বলেন, ‘প্রথমে হাকিম এবং রাব্বী দুজনেই নিখোঁজ ছিলেন। কিন্তু পরে হাকিম ফিরে আসে। তখন তাকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায় রাব্বী তার সঙ্গে যায়নি। তখন আমরা ভেঙে পড়ি। যার যার মতো খোঁজ করতে থাকি। ২৮ তারিখ আমাদের চলে আসার দিন ছিল। সেদিন বাধ্য হয়ে চলে আসি।’
রাব্বীর বন্ধু হাকিম ও তোফাজ্জল জানান, রাতে একসঙ্গে ছিলেন তারা। ও পাগলামি করেছে, বাড়াবাড়ি হয়েছে। এটুকু ছাড়া আর কিছু হয়নি। তবে কক্সবাজারে খুচরা মাদক বিক্রির হাট হিসেবে পরিচিত সমিতিপাড়ায় যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন হাকিম।
রাব্বীর আরেক বন্ধু আরিফও ইয়াবা মামলার আসামি। তিনি ২০২১ সালের ২৮ আগস্ট চট্টগ্রামের পটিয়া হাইওয়ের মইজ্জারটেক এলাকায় র্যাব-৭ এর কাছে ১৫ হাজার ৫০০ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হন। ১০ মাস জেলে থাকার পর জামিনে বেরিয়ে আবারও টেকনাফের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন। অভিযোগ আছে, এখনও মাদক ব্যবসা করেন আরিফ।
আরিফ বলেন, ‘মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছি। কিন্তু বন্ধু কোথায় আমি জানি না। এক সঙ্গে গিয়েছি। তাকে ছাড়া ফিরতে হয়েছে। পেশায় ট্রাকচালক। পরিবারের তাগিদে বাড়ি ফিরেছি।’
ইয়াবা নিয়ে বন্ধুকে বন্ধক রেখেছেন কি না এমন প্রশ্নে আরিফ বলেন, ‘কখনো সম্ভব না। কারণ আমি জেল থেকে বেরিয়ে আর ওই ব্যবসায় ফিরিনি। ট্রাক চালিয়ে সংসার চালাই।’
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) নাজমুল হুদা জানান, ঘটনা ঘটার ৬ দিন পর পরিবার জানিয়েছে। বিষয়টি জিডি হিসেবে নিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।
আরো দেখুন:You cannot copy content of this page